ভাষার ব্যঙ্গচিত্র: নজরুলের প্রহসনে ভাষার রূপ, রীতি ও প্রভাব

ভাষার ব্যঙ্গচিত্র: নজরুলের প্রহসনে ভাষার রূপ, রীতি ও প্রভাব
ভাষার ব্যঙ্গচিত্র: নজরুলের প্রহসনে ভাষার রূপ, রীতি ও প্রভাব

চাষা হাবিব

এক.

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ — ২৯ আগস্ট ১৯৭৬) বাংলা সাহিত্যের অনন্য ও বিস্ময়কর এক প্রতিভা। যিনি শুধু কবিতা ও সংগীতে নয়, নাট্যকর্ম ও প্রহসন রচনায়ও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁর জন্ম না হলে বাংলা ভাষার শক্তি সম্পর্কে আমরা হয়তো জানতেই পারতাম না। বাংলাভাষা যে বিধ্বংসী ডিনামাইট হতে পারে তা তিনিই প্রথম কবিতায়, নাটকে, প্রবন্ধে কিংবা প্রহসনে আমাদের দেখিয়েছেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে যেমন বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর, তেমনি নাট্যভাষার ক্ষেত্রেও এক ব্যতিক্রমী ভাষাস্রষ্টা। তাঁর প্রহসনসমূহ—‘মুষ্টির বন্ধন’, ‘ঝিলমিল’ ও ‘জুলু জুলু’—শুধু নাটক নয়, বরং ভাষার ব্যঙ্গ ও প্রতিবাদের মঞ্চ। তাঁর প্রহসনে ব্যবহৃত ভাষার কাঠামো, ভঙ্গি, রূপক ও কার্যকারিতা এবং নির্মাণশৈলী, বিষয়বস্তু, ভাষিক ও সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

প্রহসন মূলত একটি হাস্যরসাত্মক নাট্যরূপ যা সমাজের নানা অসংগতি, ভণ্ডামি ও কুসংস্কারকে বিদ্রূপ করে তুলে ধরে। কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনগুলোতে এই বিদ্রূপ ও ব্যঙ্গ অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং লক্ষ্যভেদী। তাঁর লেখায় হাস্যরস শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং তা ছিল একটি প্রতিরোধের ভাষা— সমাজের অন্যায়, অবিচার ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা নাটক, গান, প্রবন্ধ ও প্রহসনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রবিন্যাসের ভণ্ডামি, অসাম্য ও অন্ধত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন দৃপ্ত সাহসিকতায়। তাঁর ‘মুষ্টির বন্ধন’, ‘ঝিলমিল’ এবং ‘জুলু জুলু’—শুধু রসাত্মক নাট্যকর্ম নয়, বরং গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষ্য। এই আলোচ্য প্রহসন তিনটির একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নজরুলের নাট্যচিন্তা, ব্যঙ্গপ্রবণতা ও নাট্যপ্রতিভার গভীরতা অনুধাবনের মাধ্যমে তাঁর প্রহসনে ভাষার ব্যঙ্গচিত্র নিরূপনে ভাষার রূপ, রীতি ও প্রভাব আবিস্কারের চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রহসনের ব্যাকরণ নজরুল

প্রহসন একধরনের নাটকীয় রূপ যার মাধ্যমে হাস্যরস ও ব্যঙ্গের আবরণে সমাজের অন্তর্নিহিত অসারতা, ভণ্ডামি এবং সংকটগুলো প্রকাশ করা হয়। কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনচর্চা ছিল একপ্রকার ‘সৃজনশীল প্রতিবাদ’। তাঁর ব্যঙ্গ-নাট্যগুলোতে সামাজিক কৃত্রিমতা, শিক্ষার নামে কূপমণ্ডূকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ আঘাত লক্ষণীয়। কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনে ব্যবহৃত ভাষা একটি বহুমাত্রিক প্রতিবাদের মাধ্যম। এটি শুধুমাত্র নাট্যচরিত্রের সংলাপ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কণ্ঠ। নজরুল তাঁর ব্যঙ্গাত্মক ভাষার মাধ্যমে সমাজের অন্তঃসারশূন্যতা উন্মোচন করেছেন। এখানে তাঁর ভাষা রূপক ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ, ব্যঙ্গ ও রসের ধারালো অস্ত্র এবং চেতনায় দাগ রেখে যাওয়া নাট্যভাষার শক্ত প্রতিফলন।

ভাষার স্তরবিন্যাস বৈচিত্র্য

কাজী নজরুল ইসলামের ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ভাষার বৈচিত্র্য ও স্তরবিন্যাস। তিনি আঞ্চলিক, লোকজ, শহুরে ও ক্ল্যাসিকাল উপাদান একত্রিত করে ভাষাকে এক শক্তিশালী নাট্যচরিত্রে পরিণত করেছেন। ভাষা ও শৈলী বিবেচনায় নজরুলের প্রহসনে ব্যবহৃত ভাষা চালুভাষা, আঞ্চলিক উপভাষা, লোককথন ও পারিভাষিক রস দ্বারা সমৃদ্ধ। তাঁর সংলাপে রয়েছে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গ ও তীক্ষ্ণ মন্তব্য, যা কখনো কখনো বেফাঁস হলেও সত্যভাষণের সাহসিকতা বহন করে। যেমন, ‘মুষ্টির বন্ধন’ প্রহসনে ধনী-গরিব বৈষম্য ও উপনিবেশবাদী প্রশাসনকে নিয়ে যে ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছে তা পাঠক-দর্শককে নিছক হাসায় না, বরং ভাবায়। তাঁর ব্যবহৃত নাট্যভাষার স্তরবিন্যাসকে আমরা দেখতে পাই-

  • আঞ্চলিকতা: গ্রামীণ চরিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে মফস্বলভিত্তিক উচ্চারণ ও শব্দভাণ্ডার। এইসব লোকজ চরিত্রের ভাষায়, যেমন: কামার, চাষি, মজুর প্রভৃতিতে দেখা যায় উত্তরবঙ্গের মফস্বলের টান।
  • লোকজ কৌশল: মুখের ভাষা, কথ্য রীতি এবং লোকপ্রচলিত প্রবচনের ব্যবহার নাটকীয় প্রেক্ষাপটকে জীবন্ত করে তোলে।
  • ভাষার বৈপরীত্য: শহুরে ‘পণ্ডিত’ চরিত্রের মুখে সংস্কৃতঘেঁষা ভাষা এবং সাধারণ চরিত্রে সরল বাংলা ব্যবহৃত হয়েছে, যা শ্রেণিবৈষম্যের সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ।
  • উচ্চারণে খামতি অতিনাটকীয়তা: ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ বিভ্রাট (‘জুলু জুলু’, ‘তাল পেঁচা’) তবে এই রীতিকে নাটকীয় ভাষার একটি কৌশল বলা হয়ে থাকে।

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর প্রহসনে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা একধরনের মিশ্র ভাষা—যেখানে আঞ্চলিক, ক্ল্যাসিকাল, লোকজ ও শহুরে রূপ একত্রিত হয়ে ব্যঙ্গের একটি শক্তিশালী মাধ্যম রচনা করে। তবে, ভাষার এই মিশ্রতা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একত্রে আঘাত করার কৌশলও হতে পারে। এটি শ্রেণি ও শিক্ষাগত ভেদাভেদকে রসিকতার মাধ্যমে উন্মোচন করার উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত বলা যায়, যা তাঁর প্রহসনকে সার্থক করেছে।

ব্যঙ্গ, উপহাস বক্রোক্তির শৈলী

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনে ব্যঙ্গ ও বক্রোক্তির মাধ্যমে ভাষাকে একধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের হাতিয়ার করেছেন, যা তাঁর অনন্য প্রতিভায় চিরভাস্মর। আমরা দেখি-

  • উপহাস অতিরঞ্জন: ‘ঝিলমিল’-এ এক চরিত্রে বলেন: ‘জ্ঞান মানে তো ইংরেজির হিজে জানাই যথেষ্ট।’— এটি শিক্ষাব্যবস্থার ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যঙ্গ করে।
  • অর্থহীন শব্দ প্রয়োগ: ‘জুলু জুলু’ এর মতো শব্দ ব্যবহারে চেতনাহীন ও দিশাহীন সমাজের প্রতীকী চিত্র ফুটে ওঠে।
  • প্যারোডি: বিদ্যমান সামাজিক প্রথা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও শিক্ষিত শ্রেণির ভণ্ডামিকে হালকা হাস্যরসের মাধ্যমে বক্রোক্তিতে রূপান্তর করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো—বক্রোক্তি বা irony। তিনি সমাজের মোড়ল, পণ্ডিত ও ভণ্ড ধর্মপ্রাণদের মুখ দিয়ে এমন কিছু বলান, যা তাদের নিজের চরিত্রকেই ব্যঙ্গ করে। ‘ঝিলমিল’-এ এক পণ্ডিত বলেন: জ্ঞান মানে তো ইংরেজির হিজে জানাই যথেষ্ট।— এখানে জ্ঞানের পরিহাসিক চিত্র। ব্যঙ্গের ভাষায় ব্যবহৃত হয় অতিরঞ্জন, শব্দের পুনরাবৃত্তি (repetition) এবং কল্পিত শব্দ বা অপভ্রংশ, যেমন, ‘জুলু জুলু’ শব্দটিরই কোনো আক্ষরিক মানে নেই, এটি একধরনের প্রতীকী শব্দ।

ভাষার ব্যঙ্গচিত্র
ভাষার ব্যঙ্গচিত্র: নজরুলের প্রহসন

নাট্যসংগীত ছন্দবোধ

কাজী নজরুল ইসলামের নাট্যভাষা অনেক সময় গীতিময়। তিনি নাট্যসংলাপে কাব্যিক রূপ ও ছন্দ প্রয়োগ করেছেন, তাঁর এইসব প্রহসনে—

  • শ্লোগানধর্মী ভাষা: ‘মুষ্টির বন্ধন’-এ রাজনৈতিক বক্তব্য রিদমিক ছন্দে উচ্চারিত হয়েছে।
  • লোকসংগীতের প্রভাব: কিছু সংলাপ যেন গানের চরণ—রস ও বোধ উভয়ই উৎপন্ন করে।

রূপক বিমূর্ততা

বিশেষত ‘জুলু জুলু’ প্রহসনে ভাষা হয়ে ওঠে প্রতীকধর্মী ও বিমূর্ত। চিন্তার অন্ধকার ও সমাজের দিশাহীনতার ভাষাগত প্রতিচ্ছবি এতে পাওয়া যায়। যেমন-

  • সংলাপ: ‘আজ দিশা নেই, দিশি না, দিশতেও চাই না!’ — বিমূর্ত ও বিভ্রান্ত চেতনার ভাষা।
  • এই বিমূর্ততা সাধারণ পাঠকের জন্য দুর্বোধ্য হলেও সমাজ-মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে তা তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রহসনের বিষয়বস্তু রাজনৈতিক তাৎপর্য

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসন সাধারণত তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন, সমাজের কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। তিনি প্রহসনের মাধ্যমে তীব্র রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন, যা একদিকে যেমন বিদ্রোহের আহ্বান, অন্যদিকে তেমনি মানবিক মূল্যবোধের প্রতি এক নিবেদন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়:

  • ‘ঝিলমিল’ নাটকে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মাঝে দ্বন্দ্ব এবং ভণ্ড ধর্মান্ধতার সমালোচনা করা হয়েছে।
  • ‘মুষ্টির বন্ধন’ উপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্য ও প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

নারীর ভূমিকা

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনে নারী চরিত্র সাধারণত সাহসী, প্রতিবাদী ও যুক্তিবাদী। এটি তাঁর নারীমুক্তি ও নারী ভাবনারই প্রতিফলন। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এমন চরিত্রচিত্রণ অত্যন্ত অগ্রগামী ছিল, যা কাজী নজরুল ইসলামের অনন্য সৃষ্টিও, এ রীতি বাংলা সাহিত্যেরও অনন্য সংযোজনা।

সংলাপে রিদম নাট্যসংগীত

কাজী নজরুল ইসলাম কবি, সুরকার ও গীতিকার—এই পরিচয়ের প্রতিফলন তাঁর নাট্যভাষাতেও পরিলক্ষিত হয়। তাঁর সংলাপে আছে ছন্দ, রিদম এবং কখনো কখনো গীতিময়তা। এই বিমূর্ত ভাষা সাধারণ পাঠকের কাছে দুর্বোধ্য হতে পারে। কিন্তু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এর গভীরতা অনস্বীকার্য।

  • ‘মুষ্টির বন্ধন’-এ রাজনৈতিক বক্তব্যগুলো অনেকটা শ্লোগানের মতো রিদমে উচ্চারিত হয়।
  • ভাষা অনেক সময় গানের ধাঁচে — যেখানে পাঠকের মনে রস তোলে, আবার প্রশ্নও জাগায়।

নজরুলের প্রহসনে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার বিশ্লেষণ

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা তাঁর নাট্যকর্মকে বাস্তবসম্মত ও প্রাণবন্ত করে তোলে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের—দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও—এলাকায় প্রচলিত কথ্যভাষার ছাপ তার প্রহসনে স্পষ্ট।

. আঞ্চলিক উচ্চারণ শব্দচয়ন

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর চরিত্রদের ভাষায় উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক উচ্চারণ ও বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেন। যেমন:

  • ‘অই’ শব্দটি সাধারণ বাংলা থেকে ভিন্ন উচ্চারণে বা অর্থে ব্যবহার।
  • ‘ঢেকুড়ি’ (মুরগি), ‘ফূটা’ (পাকা পাকা) প্রভৃতি ।
  • কিছু বিশেষণ ও ক্রিয়ার রূপ, যেমন ‘খাইতেছে’ (খাচ্ছে), ‘দিছ’ (দিচ্ছে) ইত্যাদি ব্যবহার।

২. আঞ্চলিক রীতিনীতি বাক্যগঠন

এই আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে বাক্যগঠন ও শব্দবন্ধও ভিন্নরকম, যা নাটকের সংলাপকে সহজে প্রাঞ্জল ও প্রাকৃতিক করে তোলে। যেমন:

  • ‘তুমি কি করলি?’ এর পরিবর্তে ‘তুমি কী করলু?’
  • ‘আমি যাবো না’ এর পরিবর্তে ‘আমি যামু না’।

. সামাজিক সাংস্কৃতিক বাস্তবতার প্রতিফলন

আঞ্চলিক ভাষা শুধুমাত্র ভাষাগত বৈশিষ্ট্য নয়, এটি সেই এলাকার মানুষ, তাদের জীবনধারা, ভাব-ভঙ্গি এবং সামাজিক সম্পর্কের একটি প্রাণবন্ত চিত্র। কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনে এই আঞ্চলিক উপাদান স্থানীয় সংস্কৃতির জীবন্ত প্রকাশ। নাট্যভাষায় আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব ব্যাপক। যা চরিত্রদের আত্মপ্রকাশ ও পরিচয় দেয়, সমাজের ভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে পার্থক্য ফুটিয়ে তোলে এবং ভাষার মাধ্যমে শ্রেণিগত ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ সম্পন্ন হয়। ‘মুষ্টির বন্ধন’ নাটকে কামার চরিত্রের সংলাপে দেখা যায়— ‘অই তো, আমি তোরে বলছি, বুজলি না?’— এখানে ‘অই তো’ এবং ‘বুজলি’ শব্দ দুটি আঞ্চলিক উচ্চারণের নিদর্শন।

সীমাবদ্ধতা

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসেনর বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা প্রহসনের ভাষার স্বাভাবিক ফল বলা যায়। তাঁর প্রহসনের অন্যতম একটি সীমাবদ্ধতা হলো প্রকাশভঙ্গির সরলতা ও চরিত্রের কার্টুনায়ন। কখনো কখনো চরিত্রগুলো একমাত্রিক হয়ে পড়ে, কেবল একটি মতবাদ বা উদ্দেশ্য তুলে ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, প্রহসনের স্বরূপ অনুযায়ী এটি বড় ত্রুটি নয়, বরং রাজনৈতিক নাটকের ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের কৌশলও হতে পারে। নিম্নোক্ত সীমাবদ্ধতাসমূহ তাঁর প্রহসনে দৃশ্যমান:

  • অতিনাটকীয়তা: কিছু সংলাপে ভাষা এতটাই কৃত্রিম ও নাটকীয় যে বাস্তবতায় হারিয়ে যায়।
  • অতিরূপকতা: বিমূর্ততা ও প্রতীকের অতিরিক্ত ব্যবহার নাটকের তাৎক্ষণিকতা কমিয়ে দেয়।
  • শ্রোতাভেদে বোধের পার্থক্য: উচ্চশিক্ষিত পাঠকের জন্য এই ভাষা বোধগম্য হলেও সাধারণ পাঠকের জন্য জটিল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
কবি কাজী নজরুল ইসলাম

দুই.

এবার আসা যাক কাজী নজরুল ইসলামের বর্ণিত তিনটি প্রহসনের তুলনামূলক আলোচনা ও তাদের স্বরূপ বিশ্লেষণে-

মুষ্টির বন্ধন

মুষ্টির বন্ধন কাজী নজরুল ইসলামের একটি রাজনৈতিক প্রহসন, যেখানে তিনি ঔপনিবেশিক শোষণ, শ্রেণিবৈষম্য ও জাতীয় ঐক্যের অভাবকে বিদ্রুপের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এটি নিছক হাস্যরসের নাটক নয়; বরং এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা-বাহক নাট্যরূপ প্রহসনটি উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা এবং তার সহায়ক স্থানীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কেন্দ্র করে রচিত। শোষক-শোষিত সম্পর্ক, জনগণের অসচেতনতা, বিভক্তি এবং ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এই নাটকে মূল থিম। নজরুল নাটকটির মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন–যখন জনগণ বিভক্ত, তখন শাসক শক্তি মুষ্টি বাঁধে তাদের শোষণের জন্য। যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন সেই মুষ্টি খুলে যায়। এই নাটকে কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছেন। চরিত্রগুলো ভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করে, নজরুল রাজনৈতিক বিভাজনের অন্তঃসারশূন্যতা ব্যঙ্গ করেছেন। ‘মুষ্টি’ এখানে একতার প্রতীক।

চরিত্রচিত্রণে আমরা দেখি প্রধান চরিত্রসমূহ যেন সমাজের চাক্ষুষ উপস্থাপন। চরিত্রগুলো অতিনাটকীয় হলেও প্রতীকধর্মী। যেমন: হাকিম সাহেবঔপনিবেশিক ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে, পণ্ডিত ও মৌলভীগোঁড়ামি ও ধর্ম নিয়ে ব্যবসার প্রতীক, গরীব কৃষক ও মজুরশোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি এবং বিচারক বা দলিল লেখক– প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ চিত্র, প্রত্যেকটি চরিত্র এক একটি সামাজিক শ্রেণি বা মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন।

নজরুলের এই প্রহসনে অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল, কথ্য ও লোকজ ভাষার মিশ্রণ ব্যহার করেছেন, যা, ব্যঙ্গ, রসবোধ এবং অন্তর্নিহিত বেদনার মিশেল। সংলাপে আছে কৌতুক, আবার একই সাথে ব্যঙ্গাত্মক আঘাত। এ এক ধরনের সচেতন হাস্যরসযা আপনাকে হাসায় ঠিকই, কিন্তু তার নিচে চাপা থাকে প্রতিবাদের ভাষা। প্রহসনটির নাম ‘মুষ্টির বন্ধন’ নিজেই একটি প্রতীক—ঐক্য। নাটকে এই প্রতীক ব্যবহৃত হয়েছে অত্যন্ত কৌশলে:

‘যতদিন আমরা এক হতে পারি না, শত্রুর মুষ্টি ততদিন শক্ত। মুষ্টি খোলে তখনই, যখন আমরা একসাথে দাঁড়াই।’

কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের ধর্মীয় নেতা, শিক্ষিত শ্রেণি, প্রশাসনিক কাঠামো—সব কিছুকেই বিদ্রূপ করেছেন। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য ধ্বংস নয়, জাগরণ নাটকটি মূলত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে বক্তব্য রাখে। তবে তা সরাসরি স্লোগানের মতো নয়। বরং মঞ্চ ও চরিত্রের মাধ্যমে এক প্রকার সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যার রাজনৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম। প্রহসনটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাহিত্যরূপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ যা জাতিকে আহ্বান করে–

‘ঐক্য গড়ো, নিজের অধিকার বোঝো, আর মুষ্টি বাঁধো অন্যায়ের বিরুদ্ধে।’

নাটকের কিছু চরিত্র কখনো কখনো অতিনাটকীয় হয়ে ওঠে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ এত প্রবল যে নাটকীয় ভারসাম্য কিছু জায়গায় নড়বড়ে হয় এবং সরলীকরণ অনেক সময় জটিল বাস্তবতা ঢেকে দেয় যা, নাটকের সীমাবদ্ধতা হিসেবে চিহ্নিত। তবে এগুলো মূলত নাট্যরীতির অংশ হিসেবেই দেখা হয়। বলা যায় ‘মুষ্টির বন্ধ ‘ নজরুলের রাজনৈতিক প্রহসনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এটি শুধু একটি নাটক নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ এর মধ্যে রয়েছে সমাজচেতনা, ঐক্যের আহ্বান, এবং প্রতিবাদের রূপান্তরিত রূপ। নজরুল কেবল কলমে নয়, নাট্যমঞ্চেও ছিলেন এক অসামান্য বিদ্রোহী কণ্ঠ। কাজী নজরুল ইসলামের ‘মুষ্টির বন্ধন’ একদিকে হাস্যরসাত্মক বিনোদন, অপরদিকে তা একটি সাহসী ও সময়োচিত সমাজ-রাজনৈতিক ভাষ্য। প্রহসনের মধ্য দিয়ে নজরুল আমাদের শিখিয়েছেন—প্রতিবাদ কেবল রক্ত দিয়ে হয় না, হাসির মাধ্যমেও হতে পারে বিদ্রোহ।

ঝিলমিল

ঝিলমিল কাজী নজরুল ইসলামের অন্যতম ব্যঙ্গাত্মক প্রহসন, যেখানে তিনি তৎকালীন সমাজের কৃত্রিমতা, পাণ্ডিত্য-প্রথা, ভণ্ড ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এ নাটকটি হাস্যরসের আবরণে সমাজের গভীর অসারতা ও অসাম্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নাটকটি মূলত সমাজের মিথ্যা মোহভঙ্গ ও সত্যের প্রতি প্রত্যাবর্তনের আহ্বান ঝিলমিল একটি সামাজিক প্রহসন, যেখানে কৃত্রিম আভিজাত্য, পাণ্ডিত্য এবং ধর্মীয় ভণ্ডামিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। নাটকটি প্রথাবদ্ধ সমাজের চেহারাকে রঙিন ‘ঝিলমিল’ আলোর মতো উপস্থাপন করে—যা আসলে মোহময় অন্ধকার।

নাটকের কাহিনিতে একটি গ্রামের পটভূমিতে কিছু ভণ্ড নেতা, কপট পণ্ডিত, ভুঁইফোড় সংস্কারাচ্ছন্নদের চারপাশে গল্প আবর্তিত হয়। সেখানে একটি ‘ঝিলমিল’ ধরনের পাণ্ডিত্য ও আভিজাত্যের খেলা চলে– যা আসলে অর্থহীন, মিথ্যা জৌলুস। এই নাটকে কাজী নজরুল ইসলাম ব্যঙ্গ করেছেন সেই সমাজকে, যেখানে: ভাষার বাহার বেশি, অথচ চিন্তার গভীরতা নেই, আভিজাত্য আছে, মানবতা নেই এবং ধর্ম আছে, কিন্তু সহানুভূতি নেই। আর এইসব বিবেচ্য রেখেই তিনি চরিত্রগুলো তীব্র ব্যঙ্গাত্মক রূপে আঁকেন। যেমন দেখি পণ্ডিত গদাধর ভট্টাচার্যকে ভণ্ড পাণ্ডিত্যের প্রতীক হিসেবে, মৌলভী কুদরত আলীকে– ধর্মের মুখোশধারী বিভাজন সৃষ্টিকারী হিসেবে, ভবানী ও রহমানকে– সাধারণ মানুষ, যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং সুশীল, বিভূতি প্রভৃতিকে দেখি সমাজের উপরে থাকা কিন্তু ভিতরে ফাঁপা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব হিসেবে। এই চরিত্রগুলো একদিকে হাস্যকর, অন্যদিকে করুণ – কারণ তারা সমাজের বাস্তব রূপকে অতিনাটকীয়ভাবে প্রকাশ করে।

কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রহসনে ব্যবহার করেছেন, বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপ, লোকজ উপভাষা ও আঞ্চলিক শব্দ এবং ব্যঙ্গ ও রসিকতাপূর্ণ তুলনা। নাটকের সংলাপগুলো রসপূর্ণ হলেও এর অন্তরালে রয়েছে গভীর সামাজিক প্রতিবাদ। তিনি ভাষার মাধ্যমে একধরনের সচেতন উত্তেজনা সৃষ্টি করেন– দর্শক হাসবে ঠিকই, কিন্তু পরে চিন্তায় পড়বে। ‘ঝিলমিল’ শুধুমাত্র হাসানোর জন্য লেখা হয়নি। এটি একধরনের সামাজিক আয়না– যেখানে দেখানো হয়:

‘বাহ্যিক ঝিলমিল অনেক সময় সত্যকে ঢেকে দেয়। আমরা সেই আলোর মোহে সত্য ভুলে যাই।’

তাই তো কাজী নজরুল ইসলাম এই নাটকে দেখাতে চেয়েছেন– সমাজে প্রকৃত জ্ঞানচর্চার চেয়ে ভণ্ডামি ও দেখনদারির প্রভাব বেশি হয় এবং মানুষের সম্মান চরিত্র নয়, বাহ্যিক চাকচিক্য দ্বারা নির্ধারিত। এই প্রহসনটি একটি সামাজিক জাগরণের দলিল নজরুল এখানে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে প্রশ্ন করেন, তিনি শিক্ষিতদের মধ্যে থাকা কূপমণ্ডূকতাকে ব্যঙ্গ করেন। আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির অনুপস্থিতিকে কৌতুকের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, সত্যিকার পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন মানুষ ভেতরের অন্ধকার থেকে আলো খুঁজে নেবে, বাহ্যিক ঝিলমিল নয়। তবে এই নাটকের সীমাবদ্ধতা অনেক সময় আমাদেরকে কিছু চরিত্র অতিরঞ্জিত বলে মনে করতে বাধ্য করে এবং প্রহসনের সরলীকরণে জটিল বাস্তবতা ধরা পড়ে না, যা পাঠকে দ্বিধায় ফেলে। তবে এগুলো প্রহসনের রূপবৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বলে ধরা হয়।

ঝিলমিল কাজী নজরুল ইসলামের একটি ব্যঙ্গধর্মী কিন্তু গভীর দার্শনিক নাট্যকর্ম। এটি সমাজের গলিত মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং দর্শককে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানায়। এটি নজরুলের কণ্ঠে উচ্চারিত একটি মানবিক ও যুক্তিবাদী বিদ্রোহ, যেখানে হাস্যরস হয়ে ওঠে একটি বিপ্লবী হাতিয়ার ‘ঝিলমিল’ পড়া বা মঞ্চে দেখা মানে শুধু কিছু হাস্যকর দৃশ্য উপভোগ নয়, বরং সমাজ ও নিজের দিকে আরেকবার ভালো করে তাকানো – আমরা কতটা ‘আলোকিত’ আর কতটা কেবল ‘আলোয় মোহগ্রস্ত’ তাঁর হিসেব মেলানো।

কবি নজরুল
কবি নজরুল

জুলু জুলু

জুলু জুলু কাজী নজরুল ইসলামের একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যঙ্গ-নাটক, যেখানে তিনি তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটকে রম্য ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। নাটকটি নাম থেকেই বোঝা যায়, এটি একধরনের ধোঁয়াশা বা অস্পষ্টতার রূপক। ‘জুলু জুলু’ শব্দের মধ্যেই আছে দিশেহারা, উন্মাদ, অদ্ভুত ও বিভ্রান্ত একটি অনুভূতি— কাজী নজরুল ইসলাম এই নাটকে সেই সমাজকে চিত্রিত করেছেন, যা মূল্যবোধহীন, বিভ্রান্ত ও ছন্নছাড়া। এটি একটি বিমূর্ত ও দর্শনপ্রধান প্রহসন, যেখানে সমাজের চিন্তাহীনতা ও দিশাহীনতার বিরুদ্ধে একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রতিচিত্র আঁকা হয়েছে। ‘জুলু জুলু’ শব্দের মধ্যেই আছে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতার প্রতীকী অর্থ।

নাটকটির কাহিনিতে নেই কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় নায়ক– বরং এটি একটি ধারণাভিত্তিক নাটক এতে চিত্রিত হয়েছে, সমাজের ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী ও কথিত শিক্ষিত শ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক দম্ভ, বিদেশি শাসনের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং অজ্ঞতার চূড়ান্ত রূপ। নজরুল এখানে দেখাতে চেয়েছেন– সমাজ এক অদ্ভুত ‘জুলু জুলু’ অবস্থায় আছে, কেউ বুঝতে পারছে না সে কোথায় যাচ্ছে, সবাই কথা বলছে, কিন্তু কেউ সত্য বলছে না। যা এ সময়েও সমান প্রাসঙ্গিক।

নাটকের চরিত্রগুলো প্রতীকী। চরিত্রগুলো সবাই যেন নিজেদের মতো করে সমাজকে ব্যাখ্যা করছে, কিন্তু কেউ সত্য বুঝতে পারছে না– সবাই অন্ধকারে হাঁটছে যেমন: দার্শনিক হুলুস্থুল চিন্তাহীন তত্ত্বচর্চার প্রতিনিধি, পণ্ডিত শশধর মুখস্থ বিদ্যার ধ্বজাধারী, মৌলভী হাশেম আলী ধর্মকে ব্যবসায় রূপদানকারী, ডেপুটি সাহেব ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার প্রতিনিধি এবং বিচারক ‘জুলু জুলু সমাজের বিচারব্যবস্থার অন্ধকার প্রতিচ্ছবি  হয়ে বাস্তবতাকে চিত্রিত করে।

কাজী নজরুল ইসলাম এই নাটকে ভাষাকে ব্যবহার করেছেন অস্ত্র হিসেবে। তাই তো নাটকে আছে কৌতুক, আবার একই সঙ্গে প্রচ্ছন্ন সমাজতাত্ত্বিক তিরস্কার সংলাপে রয়েছে চাতুর্যপূর্ণ রসবোধ, ক্লাসিক্যাল ও লোকজ শব্দের মিশ্রণ এবং উক্তির ভেতর লুকিয়ে রয়েছে গভীর ব্যঙ্গ ফলে, ‘জুলু জুলু’ শুধুমাত্র একটি হাস্যকর নাটক নয়, বরং এটি একটি সমাজবীক্ষার নাট্যচিত্র, যার দার্শনিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম। এখানে কাজী নজরুল ইসলাম সমাজকে প্রশ্ন করেন-

‘আমরা সত্য জানার চেষ্টা করি, না কেবল নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠা করার খেলায় মেতে থাকি?’

এটি মূলত উপনিবেশিক মানসিকতা, শিক্ষার বিকৃতি ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে একটি তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ। নাটকের শিরোনাম জুলু জুলু’ নিজেই ব্যঙ্গ ও একটি রূপক – যা বোঝায় চিন্তাহীন গতি, দিশাহীন চেতনা এবং অন্ধ অনুসরণকে। এটি উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা বিভ্রান্ত সমাজের প্রতিচ্ছবি। তবে এই প্রহসনের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন- নাটকটি অনেক বেশি প্রতীকী ও বিমূর্ত হওয়ায় কিছু দর্শক বা পাঠকের জন্য কঠিন হতে পারে। কাহিনির ধারাবাহিকতা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। এবং চরিত্রগুলো নাটকীয় হলেও মাঝে মাঝে বেশি চিৎকারপ্রবণ বা কৃত্রিম মনে হয়। তবে, এই কৌশল হয়তো উদ্দেশ্য প্রণোদিত – সমাজের চরম বিচ্যুতিকে চিত্রিত করার জন্যই তিনি এমনটি করেছেন। ‘জুলু জুলু’ কাজী নজরুল ইসলামের একটি পরীক্ষাধর্মী, বিমূর্ত ও গভীর ব্যঙ্গাত্মক নাটক। এটি সমাজের চিন্তাহীনতা, ভণ্ডামি, আর আত্মবিস্মৃতির এক অসামান্য প্রতিচিত্র। নজরুল এই নাটকের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন— সত্যকে জানতে হলে আগে ভণ্ড মোহমুক্ত হতে হয়, সমাজকে জানতে হলে স্ববিচার করতে হয়, মুক্তির জন্য আলো নয়, উপলব্ধি প্রয়োজন ‘জুলু জুলু’ একদিকে যেমন রসাত্মক ও প্রহসনধর্মী, তেমনি অন্যদিকে এটি একটি আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের চিত্রনাট্য এটি একটি চিৎকার– সমাজের প্রতি, রাজনীতির প্রতি, মানুষের আত্মভোলার প্রতি।

বিদ্রোহী কবির প্রহসন নিয়ে আলোচনা
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম

তিন.

কাজী নজরুল ইসলাম কেবল কবিতার ‘বিদ্রোহী’ ছিলেন না, বরং নাট্যজগতেও তিনি তাঁর বিদ্রোহ, ব্যঙ্গ ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী ভাষা দিয়েছেন। তাঁর রচিত প্রহসনসমূহ বাংলা নাট্যসাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী সংযোজন। ‘মুষ্টির বন্ধন’, ‘ঝিলমিল’ ও ‘জুলু জুলু’— এই তিনটি প্রহসনে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার ভণ্ডামি ও সংকটকে ব্যঙ্গাত্মক উপায়ে উপস্থাপন করেছেন নজরুল। এবার প্রহসন তিনটির বিষয়বস্তু, চরিত্র, ভাষা, প্রতীক ও বার্তার ভিন্নতা ও মিল তুলে ধরা হলো বোঝার সুবিধার্থে সারণীর মাধ্যমে।

. বিষয়বস্তুর তুলনা
দিক মুষ্টির বন্ধন ঝিলমিল জুলু জুলু
মূল থিম রাজনৈতিক শোষণ ও ঐক্যের আহ্বান ভণ্ডামি ও ছদ্মআভিজাত্যের ব্যঙ্গ সমাজের দিশাহীনতা ও চিন্তাহীনতার চিত্র
কেন্দ্রীয় সংকট জনগণের বিভক্তি আভিজাত্য ও কৃত্রিম শিক্ষার মোহ অজ্ঞতা, বুদ্ধিহীনতা ও মূঢ় অনুসরণ
প্রধান শত্রু উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা ভণ্ড পণ্ডিত ও ধর্মীয় নেতা বুদ্ধিবৃত্তিক বিচ্যুতি ও সামাজিক অসংলগ্নতা

 

. চরিত্রচিত্রণ
  • মুষ্টির বন্ধন: প্রতিটি চরিত্র একটি শ্রেণি বা রাজনৈতিক মানসিকতার প্রতীক (হাকিম সাহেব, মৌলভী, মজুর)।
  • ঝিলমিল: চরিত্রগুলো অতিরঞ্জিত, কিন্তু সমাজের ভণ্ড সংস্কার ও আবরণ তুলে ধরে।
  • জুলু জুলু: চরিত্ররা অধিক বিমূর্ত ও প্রতীকী, একটি দার্শনিক রূপক নাটকের চরিত্রের মতো।

এখানে সবকটি প্রহসনে সাধারণ মিল হিসেবে দেখা যায় যে, নাটকের চরিত্ররা ব্যক্তির চাইতে ধারণার প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে এবং নাটকের ব্যঙ্গের লক্ষ্য হিসেবে সকল ক্ষেত্রেই শাসক শ্রেণি ও অচেতন জনগণকে লক্ষ্য করা হয়েছে।

. ভাষা সংলাপের ধরন
দিক মুষ্টির বন্ধন ঝিলমিল জুলু জুলু
ভাষার ধরন সরল ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক কৌতুকপূর্ণ, রসঘন, লোকজ শব্দে পূর্ণ বিমূর্ত, দার্শনিক, অলঙ্কারভেদী
রস ব্যঙ্গ + বেদনা ব্যঙ্গ + উপহাস ব্যঙ্গ + বুদ্ধিদীপ্ত অস্বস্তি
সংলাপ বাস্তবধর্মী প্রহসনধর্মী, অতিনাটকীয় রূপকধর্মী, কখনো ধাঁধামূলক

 

. প্রতীক, রূপক বার্তা
  • মুষ্টির বন্ধন– মুষ্টি প্রতীক; জনগণের ঐক্যই শোষণের বিরুদ্ধে মূল শক্তি।
  • ঝিলমিল– বাহ্যিক জৌলুসকে রূপক করে দেখানো হয়েছে; কৃত্রিমতা ও ভণ্ডামির নিন্দা।
  • জুলু জুলু– দিশাহীন শব্দই মূল প্রতীক; সমাজের বিভ্রান্তি ও চিন্তার শূন্যতা তুলে ধরা।

সবকটি প্রহসনের ভাষা ও সংলাপের ধরনে সাধারণ মিল হিসেবে দেখা যায়, তিনটি নাটকেই ব্যঙ্গ একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বক্তব্য প্রকাশের উপায় এবং প্রতীক ব্যবহারে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন চূড়ান্ত সচেতন ও সৃজনশীল।

. নাট্যরীতির ভিন্নতা সীমাবদ্ধতা
দিক মুষ্টির বন্ধন ঝিলমিল জুলু জুলু
নাট্যরীতি রাজনৈতিক ব্যঙ্গনাটক সামাজিক প্রহসন দার্শনিক রূপক নাটক
সীমাবদ্ধতা সরলীকরণ বেশি অতিনাটকীয়তা বিমূর্ততা ও স্পষ্টতার অভাব

 

এখানে নাট্যরীতির ভিন্নতা ও সীমাবদ্ধতায় মিল হিসেবে দেখা যায়, সবগুলো প্রহসনেই চরিত্রের অতিনাটকীয়তা একটি সাধারণ কৌশল এবং বাস্তবতা নয়, বরং আভিধানিক ব্যঙ্গই কাজী নজরুল ইসলামের মূল উদ্দেশ্য।

. সীমাবদ্ধতা সমালোচনা

দিক সমালোচনা
অতিনাটকীয়তা অনেক সময় ভাষা এতটাই অতিনাটকীয় ও কৃত্রিম যে বাস্তবতা হারিয়ে যায়।
বিমূর্ততা ‘জুলু জুলু’-র মতো প্রহসনে ভাষার বিমূর্ততা অর্থগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নির্দিষ্ট শ্রোতামুখিতা উচ্চ শিক্ষা বা সাহিত্যবোধ না থাকলে ভাষার ব্যঞ্জনা অনেক সময় অনুধাবনযোগ্য হয় না।

 

. তিনটি প্রহসনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়:

দিক মুষ্টির বন্ধন ঝিলমিল জুলু জুলু
মূল বার্তা রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন সমাজের কৃত্রিমতা ও ভণ্ডামির সমালোচনা দার্শনিক বিভ্রান্তি ও চিন্তার অবক্ষয়
প্রতীক মুষ্টি (ঐক্য) ঝিলমিল (মোহ ও মিথ্যাচার) জুলু জুলু (দিশাহীন সমাজ)
ভাষার ধরন সরল ও বাস্তবধর্মী কৌতুকপূর্ণ ও রসাত্মক বিমূর্ত ও রূপকধর্মী
নাট্যরীতি রাজনৈতিক ব্যঙ্গনাট্য সামাজিক প্রহসন দার্শনিক রূপক নাটক
চরিত্রচিত্রণ প্রতীকী, বাস্তব-নির্ভর অতিনাটকীয়, ব্যঙ্গাত্মক বিমূর্ত ও দর্শননির্ভর

 

তিনটি প্রহসনেই কাজী নজরুল ইসলাম হাস্যরসকে ব্যবহার করেছেন একধরনের অস্ত্র হিসেবে। তাঁর ব্যঙ্গ রসাত্মক হলেও এর তলদেশে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক বার্তা ও সামাজিক সমালোচনা। নজরুল বুঝেছিলেন—সরাসরি প্রতিবাদ কখনও কখনও প্রতিক্রিয়াশীল হয়, কিন্তু প্রহসনের ব্যঙ্গ একটি চিন্তাশীল আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। যদিও এই প্রহসনগুলোতে চরিত্ররূপ অতি নাটকীয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রূপক অতিমাত্রায় বিমূর্ত, তথাপি এগুলোর ব্যঞ্জনা বাংলা নাট্যসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজনা। বর্তমান সময়েও যখন সমাজে কৃত্রিমতা, অন্ধত্ব ও দ্বিচারিতা দেখা যায়, তখন নজরুল চর্চায় এই প্রহসনমূলক নাটকগুলো পাঠ করা হয়ে ওঠে তাৎপর্যপূর্ণ ও কাব্যিক দ্যোতনাময়।

নজরুলের নাটক
দ্রোহের কবি নজরুলের নাটকে প্রহসন

শেষকথা

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনসমূহ নিছক রসাত্মক নাটক নয়, বরং এগুলো একটি জাতির আত্মজাগরণের প্রেক্ষাপট। তাঁর ‘মুষ্টির বন্ধন’ শিখিয়েছে ঐক্যের শক্তি, ‘ঝিলমিল’ উন্মোচন করেছে ভণ্ড সংস্কারের মুখোশ, আর ‘জুলু জুলু’ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে দিশাহীন চিন্তার। তাঁর এই নাট্যকর্মগুলো বাংলা সাহিত্যের প্রহসনধারায় এক প্রজ্ঞাপূর্ণ, শাণিত ও চিরন্তন অবদান। কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনের ভাষা শুধুমাত্র সংলাপ নয়— এটি প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, ব্যঙ্গ এবং বিদ্রুপের এক বহুমাত্রিক অস্ত্র। যেখানে ভাষাই চরিত্র, ভাষাই প্রতিবাদ এবং ভাষাই হাসির আড়ালে প্রশ্ন। তাঁর ভাষা কখনো কৌতুকপ্রবণ, কখনো ক্ষুব্ধ বিদ্রোহী, আবার কখনো কাব্যময়, বিমূর্ত বা রূপকনির্ভর। এ ভাষার মধ্য দিয়েই কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজস্ব প্রহসনরীতি—যা বাংলা নাট্যসাহিত্যে আজও অতুলনীয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে যেমন বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর, তেমনি নাট্যভাষার ক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী ভাষাস্রষ্টা। তাঁর প্রহসনসমূহ হয়ে ওঠে ভাষার ব্যঙ্গ ও প্রতিবাদের মঞ্চ এবং প্রহসনে ব্যবহৃত ভাষা হয়ে ওঠে বহুমাত্রিক প্রতিবাদের মাধ্যম। যা শুধুমাত্র নাট্যচরিত্রের সংলাপ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কণ্ঠ। নজরুল তাঁর ব্যঙ্গাত্মক ভাষার মাধ্যমে সমাজের অন্তঃসারশূন্যতা উন্মোচন করেছেন। তাঁর ভাষা রূপক ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ, ব্যঙ্গ ও রসের ধারালো অস্ত্র এবং চেতনায় দাগ রেখে যাওয়া নাট্যভাষার শক্ত প্রতিফলন।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনের ভাষা তাই শুধু সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সমাজবীক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকেও অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রহসনে উত্তরবঙ্গের ভাষার প্রভাব লক্ষণীয়। বিশেষ করে দিনাজপুর, রংপুর অঞ্চলের কথ্যভাষার ছাপ কিছু চরিত্রের সংলাপে পরিলক্ষিত হয়, যা নাট্যরচনাকে আরও প্রাঞ্জল ও আঞ্চলিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলে। এই আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে নাটকের চরিত্ররা আরও স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণবন্ত এবং সাংস্কৃতিকভাবে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। পাশাপাশি এই ভাষাগত উপাদান কাজী নজরুল ইসলামের ভাষাবিন্যাসে একটি নিরীক্ষাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ করে। আবার তাঁর প্রহসনে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নাটকের আত্মাকে যেনো প্রাণবন্ত করে তুলেছে, যা ভাষার বহুমাত্রিকতা ও সাংস্কৃতিক গভীরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। এই আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ তাকে শুধুমাত্র নাট্যকার নয়, বরং ঐ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও মানুষকে জীবন্তভাবে মঞ্চস্থ করার শিল্পী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই বলা যায়, প্রতিবাদের হাসিই তাঁর প্রহসন রচনার অন্যতম উদ্দেশ্য, যা সমাজ ও রাজনীতির ব্যঙ্গরূপ এবং নির্দিষ্ট সংলাপ বা চরিত্রের অনন্য ভঙ্গিমার উদাহরণ।

কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসন সমাজ-রাজনীতির এক শাণিত আয়না, যেখানে হাসির ছলে বিদ্রোহ, আর ব্যঙ্গের ভেতরে অগ্নিঝরা প্রশ্ন। তাঁর প্রতিটি প্রহসন আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ‘প্রতিবাদ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না; ব্যঙ্গ, রসিকতা ও নাটকও হতে পারে সামাজিক বিপ্লবের হাতিয়ার।’ কাজী নজরুল ইসলামের প্রহসনের ভাষা তাই শুধু সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, সমাজবীক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকেও গবেষণাযোগ্য এক প্রজ্ঞাময় দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রহসন বাংলা নাট্যসাহিত্যে এক ব্যতিক্রমধর্মী সংযোজন। এর মধ্য দিয়ে তিনি সমাজকে আয়নায় তার প্রতিবিম্বকে দেখিয়েছেন—হাসির মুখোশে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন সমাজের দগদগে ঘা। আজও তাঁর এসব প্রহসন সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ সমাজে এখনো বিরাজমান কুসংস্কার, বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে। আজও তাঁর এই সব প্রহসনমূলক নাটক আমাদেরকে পথ দেখায়, সাহস জোগায়।

দ্রোহের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, মহাবিপ্লবী, গানের বুলবুলি-বাংলা কবিতার বরপুত্র এই মহানায়ককে জানাই ১২৬তম জন্মজয়ন্তীতে বিপ্লবী শুভেচ্ছা।

তথ্যসূত্র:
  1. কাজী নজরুল ইসলাম রচনাবলী, বাংলা একাডেমি সংস্করণ।
  2. নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত নাট্যসঙ্কলন।
  3. ড. আবদুল কাইয়ুম, ‘নজরুলের নাটকে সমাজচেতনা’, সাহিত্য বিচিত্রা, ২০০৫।
  4. আহমদ শরীফ, ‘নজরুল-ভাবনা’, ১৯৮২।
  5. চাষা হাবিব: বিদ্রোহী কবিতার ১০০ বছর: পুনপাঠ-২০২১
  6. নজরুল কোষ:বাংলাপিডিয়া, অনলাইন ভার্সন।

 

চাষা হাবিব

কবি ও গবেষক

সম্পাদক- বাহে সাহিত্যপত্রিকা।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button